কালো সাহেবের মেয়ে ইশকুল পালিয়ে। ..marie ann ...খুব জনপ্রিয় গান। মৌলি খুব শুনতো এই গান টা। আরও অনেক অঞ্জন দত্তের গান শুনতো ,শুনতো সুমন এর গান। মনের মধ্যে মিশে ছিল নচিকেতা, অন্যদিকে জীবনানন্দ। বুঝতে পারেনি তখন যে সত্যি একদিন সে পালিয়ে যাবে মেধাবী নিম্নমদ্ধবিত্ত ঘরের অপুর সঙ্গে।
অপুর মেধার কোনো ইয়ত্তা ছিল না। দুজনের দেখা হয়েছিল টিউশন এ। এদিকে মৌলি অপুর থেকে বয়সে সামান্য বড়। দুজনের বাড়ি থেকে প্রবল আপত্তি ছিল। কারণ অবশ্য ওই আর কি.....স্টেটাস এর পার্থক্য, বয়সের পার্থক্য । তারপর মান অভিমান এর বাঁধ ভেঙে একদিন আবার সব স্বাভাবিক হয়ে ওঠে. মৌলি ছিল খুব ছটফটে ,ওর ছিল এক শিশু সুলভ মন. ছোট থেকে বড় হয়েছিল বাবা মা আর ভাই এর মদ্ধমনি হয়ে। তাই বাবা মা মেনে নিলেন বিয়েটা। অন্য দিকে অপুর বাড়ি ও বৌ কে বরণ করলেন মৌলি কে। মৌলি আর অপু অভ্যাস বসত নিজেদের কে 'তুই ' বলে সম্বোধন করতো। বিয়ের পর সেই অভ্যাস থেকে নিজেদের কে বেরোতে হলো। আমাদের সমাজ তো! তুই বললে যদি সন্মান হানি হয় :-)। এরকম অনেক ছোট ছোট ঘটনা ঘটে যেটা মৌলি বুঝতে পারতো যে তাকে ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে কিন্তু খুব মার্জিত সভ্য ভাষাতে। এরকম ভাবে তিন বছর কেটে গেল। সেই প্রাণবন্ত মেয়ে সংসার আর সমাজের চাপ এ পরে খুব শান্ত একটা নারী তে পরিণত হলো। ভাবলো এটাই তো স্বাভাবিক। অপু ও কিন্তু বেশ পাল্টে যাচ্ছে। কথা কম বলে ,কাজ নিয়ে ব্যস্ত ,নিজের পরিবার কে নিয়ে ব্যস্ত। হ্যাঁ বলা হয়নি ওদের কর্মের কথা. অপু খুব ভালো একটা চাকরি করতো একটা কলেজ এ। রিসার্চ এর কাজেও খুব ব্যস্ত থাকতো অপু। মৌলি একটা স্কুল এ পড়াতো। এভাবে ভালো মন্দে কেটে যাচ্ছিলো। অপু একদিন মৌলি কে জানালো যে সে চাকরি বদলাতে চাই। অনেক জায়গা তে apply করছে। মাস খানেক পর আমেরিকার এক কলেজ এ ওকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত করা হলো। মৌলি ও খুশি। নতুন দেশ, কত এক্সসাইটমেন্ট। ভাবলো অপু ও হয়তো একটু বদলাবে।সেই আশা নিয়ে পারি দিলো আমেরিকার Philadelphia তে। সব কিছু নতুন এখানে। নিয়ম কানুন আদব কায়দা। মৌলি কাওকে চেনে না। কিছুদিন তো কেটে গেল সব কিছু দেখে বুঝে নিতে নিতে। কিন্তু তারপর!!! অপু চলে যাই কর্মক্ষেত্রে আর মৌলি বসে থাকে চার দেয়ালের মধ্যে। কি একাকিত্ত। অপু তো কথাই বলে না। তার স্ববাব আরো বদলাচ্ছে। আজকাল রাত্রে দেরি করে ফেরে, মদ্য পান ও করে খুব ঘনঘন। ঝগড়া করে খুব। এভাবে বেশ কিছুদিন কাটে। মৌলি কাওকে বলেনা এসব। ভাবে এটা হয়তো ক্ষনিকের একটা সমস্যা। আরও কটা দিন দেখিনা ! সব কথা মা বাবা কে জানানো তা খুব immaturity মনে হতো ওর কারণ অনেক সমস্যা মুহূর্তের জন্য আসে আবার সময় এর সাথে সাথে মিলিয়ে যাই। কিন্তু কিছু দিন পর বুঝলো যে এই সমস্যা মেটার নয়। রাগে দুঃখে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো মৌলি। জানে না কোথায় যাবে। কেউ তো নেই তার এই শহরে। অভিমানের আগুন জ্বলছে ওর চোখে। অনেক কিছু ত্যাগ করে এসেছিলো অপুর সঙ্গে জীবন কাটাতে। মা বাবার স্নেহ ভালোবাসা , বন্ধু দের সঙ্গ, নিজের দেশের হাওয়া মাটি সব...
একটা cafe তে বসলো গিয়ে। একটা কফি নিয়ে বসে ভাবলো মা ক ফোনে সব বলবে। পাশের টেবিল এ বসে একজন ফোনে এ কথা বলছে। গলাটা খুব চেনা। ও তো কাওকেই চেনে না এখানে। বুঝতে দেরি হলো না যে পাশের টেবিল এ বসে আছে সুমন, ওর ছোটবেলার বন্ধু। খুব অবাক হলো। জানেনা মৌলি কি হবে কিন্তু ভগবান কে অনেক ধন্যবাদ জানালো। সুমন কে সব বললো। সুমন একজন নাম করা ব্যবসায়ী ওই শহরের। ওর একটা রেস্টুরেন্ট এর chain আছে। মৌলি কে নিজের বাড়ি তে নিয়ে গেল। পরের দিন সকালে মৌলি দেখলো সে ব্রেকফাস্ট করছে একটা সুন্দর পরিবার এর সঙ্গে যার স্বপ্ন দেখেছিলো সে বহু বছর ধরে। সে ভেবেছিলো যে প্রবাদ বাক্য আছে না 'যে শই সে রই ' মা ছোট থেকে শিখিয়েছিলো , সেটা হয়তো সত্যি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বোঝেনি যে এই দুনিয়া তে অনেক নির্মম মানুষ আছে যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব হারিয়ে গিয়ে বাসা বেঁধেছে পয়সার লোভ, আরও নানান রকমের লালসা। মনে মনে ভাবছিল মৌলি যে সুমন কে বলবে যে ও দেশে ফিরে যেতে চাই এবং তার কি কি ব্যবস্থা করা যাই। কিন্তু সুমন এর মাথাতে অন্য প্ল্যান ছিল। সুমন জানতো যে মৌলি hotel management নিয়ে masters করেছিল। সুমন মৌলি কে একটা চাকরির প্রস্তাব দিলো। ওর একটা হোটেল এর ব্রাঞ্চ এর জন্য ও একজন কে খুঁজছে। মৌলি মনে মনে ভাবলো যে সত্যি এটাও সম্ভব! যেখানে সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তার জীবনে, সেখানে এতো অলৌকিক একটা ব্যাপার। নিজেকে আবার খুঁজে পেলো সেই প্রাণবন্ত মেয়েটি। নিজের সব শখ আবার করে মনে পড়লো। ও তো ভুলেই গেছিলো যে ও ভালো ছবি আঁকতো , ভালো গান গাইতো , খুব ভালো লিখতো। মাঝখানের কয়েকটা বছর কি ভাবে নষ্ট করেছে নিজে। একটা ভয় কাজ করতো সব সময়। শশুর বাড়ি তে কিছু করলেই সেটা নিয়ে একটা অশান্তি হতো, তুলনা করা হতো , অদ্ভুত ব্যাপার সব তাই খুব polished ভাবে। খুব ভদ্র ভাবে। তাই ও ভাবলোবাসা কে বাঁচাতে গিয়ে সব বিসর্জন দিয়েছিলো। তাই মৌলি ক্রমশ নিজের চাকরির সঙ্গে সঙ্গে গান, ছবি আঁকা সব শুরু করলো। এদিকে অপু কিন্তু কোনো খবর নেয়নি। ও মৌলির বাড়িতে ফোন করে বলে যে মৌলির যে চারত্রিক ত্রুটি ছিল সেটা প্রমাণ করার জন্য ঘর থেকে চলে গেছে। মিথ্যা অপবাদ দিলো। আচ্ছা ভালোবাসা কি সত্যি আছে? কোথায় থাকে এই আবেগ? মৌলি কে কি অপু ভালোবাসেইনি না কি career ফ্রন্ট সিট নিয়ে নিলো!!! অপু ভুলে গেল কি যে ওর ক্যারিয়ার এর উন্নতির পিছনে মৌলির নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল, ছিল অনেক ত্যাগ , যার কথা সে কোনোদিন কাওকে বলেনি।
No comments:
Post a Comment